সহজে ব্যবসা করার পরিবেশের (ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস) নিরিখে বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় এক লাফে ২৩ ধাপ এগিয়ে গেল ভারত। ২০১৭ তে প্রকাশিত তালিকায় ভারতে স্থান ছিল ১০০ নম্বরে, এবছর রয়েছে ৭৭ এ।
গত বুধবার দিল্লিতে প্রকাশিত হয় বিশ্ব ব্যাঙ্কের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট, ২০১৯। আর এই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের বিচারে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে ভারত।
গতবছর এই তালিকায় ৩০ ধাপ এগিয়েছিল ভারত আর গত চারবছরে এগিয়েছে মোট ৬৫ ধাপ। এই রিপোর্টে ভারতকে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির মধ্যে সেরা ঘোষণা করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ২০১৪ তে ভারতের স্থান ছিল ষষ্ঠ। ব্রিকস্ (BRICS)-এর দেশগুলির মধ্যে ভারত রয়েছে তিন নম্বরে।
১৯০ টি দেশের মধ্যে মোট ১০টি সূচকের নিরিখে এই তালিকা তৈরি করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, তার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, ব্যবসা শুরু, নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুত্ সংযোগ, কর মেটানো, দেউলিয়া সমস্যার সমাধান, সম্পত্তি নথিভুক্তিকরণ, ঋণ পাওয়া, চুক্তি কার্যকর করা ও সংখ্যালঘু অংশীদার। বুধবার প্রকাশিত তালিকায় দেখা যাচ্ছে, এই ১০টির মধ্যে ছ’টি ক্ষেত্রেই গতবারের থেকে এগিয়েছে ভারত, আর সাতটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলন (ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্র্যাকটিসেস)-এর কাছাকাছি সরেছে।
সবথেকে বেশি উন্নতি হয়েছে নির্মাণের অনুমতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। নির্মাণের অনুমতি প্রদানে ১৮১ থেকে এক লাফে ৫২ তে উঠে এসেছে ভারত, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উন্নতি হয়েছে ৬৬ ধাপ। এছাড়া উন্নতি হয়েছে নতুন ব্যবসা তৈরি, ঋণ পাওয়া, বিদ্যুত সংযোগ, এবং চুক্তি কার্যকর করা এই ৪টি ক্ষেত্রে। ঋণ পাওয়া ও বিদ্যুত সংযোগে তালিকার প্রথম ২৫ এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ভারত।
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বুধবার বলেন,
“কর মেটানো, সম্পত্তি নথিভুক্তিকরণ, দেউলিয়া সমস্যার মোকাবিলা, নতুন ব্যবসা শুরু, চুক্তি কার্যকর করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে নজর দিয়ে এই ক্ষেত্রগুলিতে উন্নতি করতে পারলে তালিকায় ৫০ এ উঠে আসা একেবারেই অসম্ভব নয়”, তিনি আরও বলেন, “যেহেতু এই তালিকা তৈরি হয় জুন ১ অবধি পাওয়া তথ্যের নিরিখে তাই জিএসটি বা গুডস্ এন্ড সার্ভিসেস্ ট্যাক্স লাগু হওয়ার সুফল এই রিপোর্টে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়নি, আগামী বছরের রিপোর্টে এই সুফল ভাল ভাবে বোঝা যাবে”।
এই নিয়ে পরপর দু’বার সেরা ১০টি উন্নয়নকারী দেশ (টপ টেন ইমপ্রুভার)-র মধ্যে স্থান পেল ভারত, রয়েছে পঞ্চম স্থানে, তৃতীয় চিন। বিশ্ব ব্যাঙ্ক আরও জানিয়েছে গুণমান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াতেও উন্নতি করেছে ভারত।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের গ্লোবাল ইন্ডিকেটরস্ গ্রুপের অধিকর্তা রিতা রামালহো এদিন বলেন,
“এ বছরের ফলাফল দেখাচ্ছে, ছোট এবং বড় দুধরণের অর্থনীতিতেই সরকার ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং বেসরকারী শিল্পর উন্নতিতে বদ্ধপরিকর”।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবসা সহায়ক পরিবেশের নিরিখে শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ড, এরপর যথাক্রমে রয়েছে সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক এবং হংকং। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে অষ্টম স্থানে আর চিন ৪৬ এ।
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই রিপোর্ট আগামী দিনে ভারতে লগ্নি টানতে অনেকটাই সাহায্য করবে, বাড়বে বিদেশী বিনিয়োগ। পাশাপাশিই এই রিপোর্ট উত্সাহ যোগাবে নতুন উদ্যোগপতিদের।
তথ্যসূত্রঃ Press Information Bureau
ফিচার্ড ইমেজ ক্রেডিট: Pixabay